গোপন দান

এই বিপদে রিকশাওয়ালাকে ১০টা টাকা বাড়িয়ে দেয়া,মানুষকে কিছু দিয়ে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসা নিঃসন্দেহে ভাল কাজ।কিন্তু যখন সেটা আপনি ফেসবুকে প্রচার করে বেড়াবেন তখনই সেই টাকাটা নিজের জাহান্নামের জন্য লাকড়ি ক্রয় করার মত নিকৃষ্ট মানের কাজে পরিণত হবে।শয়তানের বুদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে ওঠা মানুষের পক্ষে কখনও সম্ভব নয়।সে আপনাকে বুঝাবে,এসব দান প্রচার করলেই ত মানুষ উৎসাহ পাবে।অভাবীদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে।নয়ত মানবতার জাগরণ হবে কিভাবে?দরিদ্র মানুষগুলোর অভাব মিটাবে কে? নিজেকে জিগ্যেস করুন,অভাবীদের অভাব দূর করার আপনি কে?আপনি কি তাদের রিজিকের দায়িত্ব নিয়েছেন?এর চেয়েও খারাপ পরিস্থিতি তাদের জীবনে আগে আসে নি এটা কি নিশ্চিত হয়ে বলতে পারবেন?কে তাদের ঔ সময়ের আর্তনাদ শুনেছিল?অবুঝের মত কেন বারবার শয়তানের ফাঁদে হুট করেই পা বাড়িয়ে দেন?মানুষকে দানের জন্য উৎসাহ দিন কিন্তু সেটা নিজের দানকে নষ্ট করে নয়!দিনশেষে এত কিছু দান করে যদি আখিরাতে খালি হাতে ফিরতে হয় তবে এর চেয়ে চরম ব্যর্থতা আর কি হতে পারে? আপনি কি জানেন সেই সাত ব্যক্তির কথা যারা হাশরের মাঠে প্রখর রোদের আড়ালে তাদের মহামহিম প্রভুর আরশের ছায়াতলে স্থান পাবে?হ্যা; তাদেরই একদল হল যারা এমনভাবে দান করে যে, যদি ডান হাতে কাউকে কিছু দেয় সেটা বাম হাতও বুঝতে না পরে।লোক দেখানো,ঢোল পিটানো দান ইসলাম স্বীকৃতি দেয় না।ইসলাম সেই দানের কথা বলে যে দান শুধু আপনি আর আরশের মালিক ছাড়া যাকে দান করেছেন সেও জানতে না পারে।ইসলাম সেই দানের জন্যই উদ্ভোদ্ধ করে, যে দান করলে কাউকে দরিদ্র বলে তার উপর দয়া করা হয়েছে এমন হীনমন্যতায় অভাবী লোকটিকে না ভোগতে হয়।ইসলাম সেই দানের কথাই বলে যে দান করলে আপনি মানুষকে খুশি করার চেয়ে আরশের রবের খুশি হওয়াটাকেই বেশি প্রাধান্য দিবেন।এটাই উত্তম দান।এখানে গ্রাহক জানে না কার উছিলায় এসেছে সে শুধু বুঝে তাকে আল্লাহই এটা পাঠিয়েছেন। আর শ্রদ্ধা সম্মানে মাথানত করে প্রভুর দরবারে শুধু ফরিয়াদ করে সেই অচেনা,অজানা ব্যক্তির।এর চেয়ে উত্তম ছদকা আর কি হতে পারে?এর চেয়ে পবিত্র অনুভূতি আর কি হতে পারে?আপনি যদি সত্যিই কাউকে স্রষ্টার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে দান করেন তবে আপনার দানের সক্ষমতা ত আরও বৃদ্ধি পাবেই এমনকি যদি ১০০ টাকা দান করেন গৃহীত ব্যক্তি ১০০ টাকার মাঝে হাজার টাকারও বেশি বরকত পাবে।কারণ: তার কাছে এটা অনেক সম্মানের,শ্রদ্ধার,ভালবাসার মূল্যবান বস্তু।আর যদি কারো অভাব দেখে এমনিই এমনিই দান করেন তবে তার হাঁসি আপনার মন ভরালেও আপনার দান তার উদর পূর্ণ করবে না। হয়ত বেলা শেষে তার উপলব্ধি হবে, সে করুণার পাত্র বৈ কিছু নয়।উলটো আপনার এমন বাড়িয়ে দেয়া তাকে লোভী করেও তুলতে পারে।যা সমাজে আপনার চেয়ে নিচু পেশার মানুষগুলোর জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে। ধরুন,আপনার সামর্থ্য আছে আপনি বাড়িয়ে দিলেন কিন্তু যাদের সামর্থ্য নাই বাড়িয়ে দেয়ার তাদের কাছেই যদি সে চেয়ে বসে এর দায়ভার কার?ইসলাম আপনার বহু আগেই এসব নিয়ে ভেবে ফেলেছে।কারণ:সৃষ্টিকর্তা কি আপনার চেয়ে বেশি অবগত নয় যে,কোন দানে সমগ্র সমাজের কল্যাণ রয়েছে?অবশ্যই তিনি বেশি জানেন।এজন্যই গোপন দানের প্রতি বেশি উৎসাহ দেয়া হয়েছে।শয়তান যে আপনার মহৎ কর্মগুলোকে তার মত সাঁজিয়ে তুলছে আপনার ইমোশনকে বশে আনার মাধ্যমে ;একবারও কি তা উপলব্ধি হয়না?শুধুমাত্র আপনার দানের ধরণ পালটে দিতে পারে সমাজ,পালটে দিতে পারে সমাজের মানুষের জীবনযাত্রা। দান এমনভাবে করুন যাতে গ্রাহক দিন শেষে হীনমন্যতায় না ভোগে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে পারে।দান করা মানে আপনার কাছ থেকে কমে যাওয়া কিংবা নিঃশেষ হয়ে যাওয়া নয়।দুনিয়াতে আপনি যত বেশি দান করবেন এসবই আপনার আখিরাতের একাউন্টে গিয়ে জমা হবে।মিযানের বাম পাল্লা যেদিন একের পর এক বদ আমলের কারণে ভারী হতে থাকবে সেদিনই এই একাউন্ট থেকে ইচ্ছামত উত্তোলন করে ডান পাল্লাকে ভারী করতে পারবেন।একবার ভাবুনত,যদি আখিরাতের একাউন্টে কিছুই না থাকে, সেখানে গিয়ে দেখেন যে ব্যালেন্স জিরো তখন কি হবে আমার? আপনার?তাই দানের ক্ষেত্রে সচেতন হওয়া উচিত।এমন দান করাও উচিত নয় যে একাউন্টের সিকিউরিটি সিস্টেমটাই দুর্বল।গোপন দান করুন কেবল সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে যাতে আপনার একাউন্টের প্রতিটা টাকাই আখিরাতের জন্য নিরাপদে গচ্ছিত থাকে,যাতে সমাজ আপনাকে বড় দানবীর উপাধি দিয়ে না দেয়,যাতে দিনশেষে আপনি অহংকারী হয়ে না ওঠেন।এমন দান করা উচিত নয় যে দানের বিনিময়ে কেবল রাস্তাঘাটে মানুষের কাছ থেকে লোক দেখানো সম্মান ক্রয় করা যায়।