নারী ও পুরুষের পরস্পর কাদের সামনে যাওয়া জায়েজ? - পর্দার বিধানঃ পর্ব ২ - ইসলাহ

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য; আমরা তাঁর প্রশংসা করি, তাঁর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি, তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং তাঁর নিকট তাওবা করি। অত:পর আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস আল্লাহ তাআলা কবুল করুক। এই সময়ে ইসলামি ব্লগ অত্যন্ত জনপ্রিয় উঠেছে। এই বিপ্লবের গনজোয়ারে ইসলামের সঠিক ও চূড়ান্ত বার্তা পৌঁছাতে পোষ্ট গুলো বেশি বেশি শেয়ার করুন। আল্লাহ তা আলা আমাদের কবুল করুন। আমিন

Breaking

Home Top Ad

কুরআন ও হাদিসের ভবিষ্যৎবাণী গুলো সবাইকে জানিয়ে সচেতন করতে চাই।

Post Top Ad

এখানে এ্যাড দেওয়া হবে

Monday

নারী ও পুরুষের পরস্পর কাদের সামনে যাওয়া জায়েজ? - পর্দার বিধানঃ পর্ব ২

নারী ও পুরুষের পরস্পর কাদের সামনে যাওয়া জায়েজ?

বিশেষ করে আত্মীয় স্বজনের মধ্যকার মাহরাম আর গায়রে মাহরাম কারা এই বোধটুকু পর্যন্ত অনেকের নেই। পর্দা তো বহু দূরের পথ। অথচ নিজেকের বড় দ্বীনদার বলে মনে করি আমরা। ঘরের বাইরে দাড়ি-টুপি-পাঞ্জাবিওয়ালা এবং বুরকা-নিকাবিওয়ালা কিন্তু আত্মীয়দের মাঝে গায়রে মাহরামদের সাথে পর্দা করার কোন প্রয়োজনীয়তা তারা অনুভব করেন না। অথচ একজন পুরুষের জন্য বাইরের নারীকে দেখা যেমন হারাম ঠিক তেমনি আত্মীয়দের মাঝে যারা নন মাহরাম তাদেরকে দেখাও হারাম। ঠিক তেমনি একজন নারীর জন্য যেমন বাইরের পুরুষদের দৃষ্টি থেকে নিজেকে ঢেকে রাখা ফরজ, আত্মীয়দের মধ্যকার নন মাহরামদের সামনে দেখা দেয়াও তাদের জন্য হারাম।

অথচ একজন পুরুষ তার চাচাত,মামাত,ফুফাতো বোনদের সাথে বসে আড্ডা দেয়, ৩২ দাঁত বের করে হাসাহাসি করে, মামি, চাচিদের মায়ের মতো মনে করে, ভাবির সাথে গল্পগুজব করে। অথচ তাদের সাথে পর্দা আর বাইরের একজন নারীর সাথে পর্দার হুকুম একই। একজন নারী দেবরকে ভাই মনে করে, জামাইয়ের চাচা,ফুফা,খালু,দুলাভাই অমুখ তমুখের সামনে বসে কথাবার্তা বলে। অথচ তাদের সাথে পর্দা আর বাইরের একজন পুরুষের সাথে পর্দার হুকুম একই।

দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমাদের একান্নবর্তী পরিবারগুলো পর্দার বিধান লঙ্ঘনের এক উর্বর ক্ষেত্র। গায়রে মাহরাম তথা কাদের সাথে দেখা দেয়া হারাম তা অনেকেই জানি না বা জানলেও মানার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারি না। ভাবি,দেবর, চাচি,মামি, শালি, দুলাভাই,কাজিন ইত্যাদি সম্পর্কগুলো আমাদের কাছে ডাল ভাত।কিন্তু এরাও একজন অপরজনের জন্য গায়রে মাহরাম তথা  পরস্পর পরস্পরের সামনে পর্দা করা ফরয


অথচ একসাথে একই বাসার ছাদের নিচে থাকলে পর্দা রক্ষা করে চলা সম্ভব হয় না। খাওয়ার টেবিলে দেখা, চলতে ফিরতে দেখা, কতোভাবে যে পর্দা লঙ্ঘিত হয় তা আমরা চিন্তা করেও দেখি না। এজন্য ইসলাম একান্নবর্তী পরিবারকে উৎসাহিত করে না। বরং পরিবারে একাধিক সদস্য থাকলে বিয়ের পরে আলাদা বাড়িতে থাকাই সর্বোত্তম পর্দার হুকুম পালনের জন্য। এতে আত্মীয়তার সম্পর্ক নষ্ট হয় না বরং মহান আল্লাহ্‌র হুকুম পালনের ফলে আত্মীয়তার বন্ধন আরও দৃঢ় হয়।  


হযরত আয়িশা (রা) হতে বর্ণিত,  আমি আমার সে ঘরে প্রবেশ করতাম যাতে রাসূলুল্লাহ (সঃ) শুয়ে আছেন, তখন আমি আমার বড় চাদর নির্দ্বিধায় খুলে রাখতাম আর ভাবতাম "ইনি হলেন আমার স্বামী আর অপরজন আমার পিতা।।"
পরে যখন হযরত উমর (রা) এই ঘরে দাফন করা হল, আল্লাহের কসম আমি কখনো পুরো শরীর কাপড়ে না ঢেকে সেখানে প্রবেশ করি নি, উমর (রা)কে লজ্জা করার কারণে।।
[মুসনাদে আহমদ, মিশকাত হাদিস নং- ১৬৭৪]
আয়িশা (রা) মৃত পুরুষ থেকে পর্দা করতেন, আর আমাদের মা বোনেরা জীবিত পুরুষ থেকেও পর্দা করে না।।

"আমাকে যেন রাতের বেলায় দাফন করা হয়।। কারণ আমি চাই না দিনের আলোতে কেউ আমার শরীরের দৈর্ঘ্য প্রস্থ দেখুক"।
----- হযরত ফাতিমা (রা) বিনতে মুহাম্মদ (সঃ)

আল্লাহু আকবার !!!


১) রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
“কোনো পুরুষ কোনো নারীর সাথে নির্জনে মিলিত হলে নিঃসন্দেহে তাদের তৃতীয়জন হয় শয়তান। (অর্থাৎ তখন শয়তান তাদের মনে কুমন্ত্রণা দেয়)।”
[জামে তিরমিযী, হাদীস : ১১৭১]


২) রাসুল(সঃ) ইরশাদ করেন, খবরদার তোমার বেগানা স্ত্রীলোকের ঘরে প্রবেশ করো না। জনৈক সাহাবী জিজ্ঞাসাকরেন ইয়া রাসুলুল্লাহ(সঃ) স্বামীর ভাইদের(ভাসুর, দেবর, বেয়াই ইত্যাদি) সম্পর্কে কিনির্দেশ? রাসুল(সঃ) ইরশাদ করেন তারা তো স্ত্রীর জন্য মৃত্যুতুল্য। অর্থাৎমহাবিপদতুল্য। (তিরমিজিঃ ১/২২০)

৩) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- "চোখের জিনা হলো তাকানো,মুখের জিনা হলো বলা,কু-প্রবৃত্তি কামনা ও খায়েশ তৈরি করে এবং যৌনাঙ্গ তা সত্য মিথ্যা প্রমাণ করে।" [সহিহ বুখারী হাদীস নং ৫৮০৯]

৪) আরেক বর্ণনায় এসেছে, মাহরাম পুরুষ ছাড়া যেন কোনো নারী কোনো পুরুষের সাথে নির্জনে মিলিত না হয়। [সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৩৪১]

সূরা নিসার ২৩ নং আয়াতে মহান আল্লাহ্‌ কাদের সাথে পর্দা করে চলতে হবে তার নির্দেশ দিয়েছেন। নারী এবং পুরুষদের যাদের সাথে দেখা করা জায়েজ তাদের একটা লিস্ট দেয়া হলো। এর বাহিরে বাকিদের সাথে শরিয়াতসম্মতভাবে পর্দা রক্ষা করে চলতে হবে। 

নারীদের মাহরাম তথা যাদের সাথে দেখা করা জায়েজঃ



বাবার মতো (৫ জন) -

(১) বাবা (২) চাচা (৩) মামা (৪) শ্বশুর (৫) দুধ-সম্পর্কীয় বাবা


ভাইয়ের মতো (৫ জন) -

(৬) আপন ভাই (৭) দাদা (৮) নানা (৯) নাতী (১০) দুধ-সম্পর্কীয় ভাই

ছেলের মতো (৪ জন) -

(১১) ছেলে (১২) ভাই এর ছেলে (১৩) বোনের ছেলে (১৪) মেয়ের জামাই




উপরোক্ত পুরুষগণ ছাড়া কোন মহিলার জন্য অন্য কোন পুরুষের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ সম্পূর্ণ হারাম।



পুরুষের মাহরাম তথা যাদের সামনে যাওয়া জায়েজঃ



মায়ের মতো (৫ জন) -

(১) মা (২) খালা (৩) ফুফু (৪) শাশুড়ী (৫) দুধ-সম্পর্কীয় মা


বোনের মতো (৫ জন)-

(৬) আপন বোন (৭) দাদী (৮) নানী (৯) নাতনী (১০) দুধ-সম্পর্কীয় বোন


মেয়ের মতো (৪ জন) -

(১১) মেয়ে (১২) ভাই এর মেয়ে (১৩) বোনের মেয়ে (১৪) ছেলের বউ


উপরোক্ত মহিলাগণ ছাড়া কোন পুরুষের জন্যঅন্য কোন মহিলার সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করা জায়েজ নয়। সম্পূর্ণ হারাম।

দলিল

“হে মুমিনগণ! তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া নাহলে তোমরা খাওয়ার জন্য আহার্য রন্ধনের অপেক্ষা না করে নবীর গৃহে প্রবেশ করো না। তবেতোমরা আহুত হলে প্রবেশ করো,তবে অতঃপর খাওয়া শেষে আপনা আপনি চলেযেয়ো, কথাবার্তায়মশগুল হয়ে যেয়ো না। নিশ্চয় এটা নবীরজন্য কষ্টদায়ক। তিনি তোমাদের কাছেসংকোচ বোধ করেন; কিন্তু আল্লাহসত্যকথা বলতে সংকোচ করেন না। তোমরা তাঁরপত্নীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়ালথেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরেরজন্যে এবং তাঁদের অন্তরের জন্যে অধিকতরপবিত্রতার কারণ। আল্লাহর রাসূলকেকষ্ট দেয়া এবং তাঁর ওফাতের পর তাঁরপত্নীগণকে বিবাহ করা তোমাদের জন্য বৈধনয়। আল্লাহর কাছে এটা গুরুতর অপরাধ।
তোমরা খোলাখুলি কিছু বল অথবা গোপন রাখ, আল্লাহ সর্ব বিষয়েসর্বজ্ঞ।

নবী-পত্নীগণের জন্যে তাঁদের পিতা পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নি পুত্র, সহধর্মিনী নারী এবং অধিকার ভুক্ত দাসদাসীগণের সামনে যাওয়ার ব্যাপারে গোনাহ নেই। নবী-পত্নীগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয়কর। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ব বিষয় প্রত্যক্ষ করেন।” {সূরা আহযাব-৫৩-৫৫}

“মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদেরদৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযতকরে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে।নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তাঅবহিত আছেন।
ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদেরদৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌনঅঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যাসাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদেরসৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেনতাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলেরাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোকঅধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ,ও বালক,যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর,যাতে তোমরা সফলকাম হও।” {সূরা নূর-৩০-৩১}


দ্রষ্টব্য:

সূরা আহযাব-৫৩-৫৫  সূরা নিসা-২৩  সূরা নূর-৩০-৩১  তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন-২/২৫৬-৩৬১   তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন-৬/৪০১-৪০৫  তাফসীরে মাযহারী-২/২৫৪-২৬১ ও ৬/৪৯৭-৫০২


মহান আল্লাহ্‌ আমাদেরকে পর্দার বিধান যথাযথভাবে বুঝার এবং মেনে চলার তাওফিক দান করুন।

No comments:

Post a Comment

ALHAMDULILLAH MEDIA