ইলুমিনাতি পার্ট - ১৬ (ক্লোন ষড়যন্ত্র)
যারা বায়োলজি পড়েছেন অথবা যারা হলিউড প্রেমী তারা হয়তো সবাই কম বেশি ক্লোনিং অথবা ক্লোন শব্দ গুলোর সাথে পরিচিত, তবুও সবার জানার জন্য বলছি, “ক্লোন” শব্দের অর্থ “অনুরূপ প্রতিলিপি” আর ক্লোনিং হলো ক্লোন তৈরির প্রক্রিয়া। একটু ভাল করে বললে, ক্লোনিং হলো অতি অত্যাধুনিক একটি প্রযুক্তি যার মাধ্যমে একটা প্রাণীর ক্রোমোজোম বা ডিএনএ (কোষের নিউক্লিয়াসে অবস্থিত এক বিশেষ ধরনের জৈব অ্যাসিড যা একটি জীবের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সবকিছু নিয়ন্ত্রন করে –জন্ম, মৃত্যু, চেহারা, আকার-আকৃতি, আচার ব্যবহার, বেড়ে উঠা ইত্যাদি) ব্যবহার করে হুবহু সেই প্রাণীর অনুরূপ আরেকটি প্রাণী করা হয় – যা জেনেটিক এবং ফিনোটাইপিক উভয় দিক থেকেই অনুরূপ হবে। সোজা কথায় ক্লোনিং হল কোন জিনগত ভাবে কোন কিছুর হুবহু প্রতিলিপি তৈরি করা।
ক্লোনিং প্রযুক্তিতে প্রথম প্রাণীর নাম ডলি। না, এটা কারো প্রেমিকার নাম নয়, এটা ছিল একটি মেষ শাবক। ডলির জন্ম হয়েছিল ৫ ই জুলাই ১৯৯৬ সাল এবং গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয় ২২শে ফেব্রুয়ারী ১৯৯৭। ডলির নামকরণ করা হয় বিখ্যাত গায়িকা ডলি পার্টনের নাম অনুসারে এবং ডলির সাঙ্কেতিক নাম (CODE NAME) ছিল 6LL3। ডলিকে তৈরি করা হয়েছিল ক্লোনিংয়ের রস্লিন পদ্ধতিতে যা “সোমাটিক সেল নিউক্লিয়ার ট্রান্সফার” পদ্ধিতিরই একটি বিশেষায়িত রূপ। এডিনবার্গ এর বিখ্যাত রস্লিন ইন্সটিটিউটের ইয়ান উইল্মুট, কেইথ ক্যাম্পবেল এবং তাদের সহকারীরা এই ক্লোন করে। মজার বিষয় হল, ডলির মা ছিল তিনজন – একটির থেকে দেহকোষ, আরেকটি থেকে ডিম্বাণু নেওয়া হয় এবং তৃতীয়টির গর্ভে ডলির ভ্রূণকে বড় করা হয়। প্রথম মাতার (যার অনুরূপ দেখতে হবে) দেহের ম্যামারি গ্লান্ড থেকে কোষ নিয়ে নিউক্লিয়াসটি পৃথক করা হয়, অতঃপর সেটিকে দ্বিতীয় মাতা থেকে প্রাপ্ত নিউক্লিয়াস বিহীন ডিম্বাণুতে স্থাপন করা হয় তারপর বৈদ্যুতিক শক্ প্রদান করা হয় এবং টেস্টটিউবে রেখে পর্যবেক্ষণ করা হয়। ছয়দিন পর যখন দেখা গেল সবকিছু স্বাভাবিক ভাবে এগুচ্ছে, তখন ডলির ভ্রূণটি তৃতীয় মাতার জরায়ুতে প্রতিস্থাপন করা হয়। এরপর ডলি স্বাভাবিক ভাবে গর্ভে বেড়ে ওঠে এবং জন্মগ্রহণ করে।
ডলি স্বাভাবিক প্রজননের মাধ্যমে ছয়টি বাচ্চা প্রসব করে – এর মধ্যে প্রথমটির নাম দেওয়া হয়েছিল “বনি” যেটার জন্ম হয়েছিল এপ্রিল ১৯৯৮ সালে। ২০০১ সালে ডলি আরথ্রাইটিসে আক্রান্ত হয় এবং কয়েক মাসের মধ্যে উপযুক্ত চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠে। এরপর অনেকদিন সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল কিন্তু ২০০৩ সালের ১০ই ফেব্রুয়ারী আবার ডলি অসুস্থ হয়, সিটি স্ক্যান (CT Scan) করানো হয়। সিটি স্ক্যানে ডলির বুকে টিউমার ধরা পড়ে যেটা আরোগ্য করা সম্ভব নয়। যেহেতু ডলিকে বাঁচানো যাবেনা তাই টেস্টে ব্যবহারিত অ্যানেস্থেসিয়ার (চেতনা নাশক পদার্থ) পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া হয় যাতে ডলির জ্ঞান আর না ফিরে আসে। যদিও ডলির সম্ভাব্য জীবন কাল ধরা হয়েছিল ১১ থেকে ১২ বছর (একটি স্বাভাবিক ভেড়ার জীবনকাল ১০-১২ বছর) কিন্তু মাত্র সাড়ে ৬ বছর পরেই ১৪ই ফেব্রুয়ারী ২০০৩ সাল, শুক্রবার ডলি ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় (সত্যি বলতে, মেরে ফেলা হয়)। ডলি মারা যাওয়ার পর তার ব্যবহারিত সবকিছু স্কটল্যান্ডের জাতীয় যাদুঘরে রাখা হয়।
২০১৩ সালে জুন মাসে বিবিসির বরাত দিয়ে একটি সংবাদ প্রচার করা হয়-
বহু বছরের গবেষণার পর বিজ্ঞানিরা মানুষের ক্লোন বা অবিকল প্রতিরূপ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। মানুষের এ ক্লোন তারা স্টেম সেল তৈরির কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। ক্লোন থেকে নেয়া এই স্টেম সেল বা কোষ ব্যবহার করে চিকিৎসার কাজে তারা হৃদপিন্ডের মাংসপেশী, হাড়, মস্তিষ্কের কলা বা শরীরের বিভিন্ন অংশের জন্য কোষ তৈরি করতে পারবেন, যেটাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য বিরাট একটা অগ্রগতি হিসাবে দেখা হচ্ছে। ব্রিটেনে নিউকাসল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অফ হিউম্যান জেনেটিক্স বিভাগের লায়াল আর্মস্ট্রংয়ের তত্ত্বাবধানে একটি গবেষক দল আট বছর আগে মানব ক্লোন তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন, কিন্তু তারা তাদের গবেষণাকে স্টেম সেল তৈরির পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারেন নি।
এখন যে বিজ্ঞানীরা এই কাজে সফল হয়েছেন তারা সোমাটিক সেল নিউক্লিয়ার ট্রান্সফার নামে একটি পদ্ধতি ব্যবহার করে মানব ক্লোন থেকে স্টেম সেল তৈরি করেছেন। এই পদ্ধতিই ব্যবহার করে ১৯৯৬ সালে ডলি নামে ভেড়ার ক্লোন সৃষ্টি করা হয়েছিল, যা বিজ্ঞানের ইতিহাসে একটা যুগান্তকারী আবিষ্কার হিসাবে স্মরণীয় হয়ে আছে। এই পদ্ধতি অনেক পশুর দেহে ব্যবহার করে ক্লোন তৈরিতে বিজ্ঞানীরা সফল হলেও মানুষের ক্লোন সৃষ্টিতে এই পদ্ধতির ব্যবহারে বিজ্ঞানীরা এর আগে সফল হতে পারেন নি। কিন্তু আমেরিকার অরিগান হেলথ্ অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটির ড. সুখরাত মেটালিপফ চা এবং কফির রাসায়নিক উপাদানকে কাজে লাগিয়ে এবার একই পদ্ধতি ব্যবহার করে মানুষের ক্লোন সৃষ্টিতে সফল হয়েছেন।
ড. মেটালিপফ বলছেন স্টেম সেল ব্যবহার করে শরীরের যেকোনো নষ্ট হওয়া কোষ আবার পুনরুদ্ধার করা যায়, অথবা শরীরের যেকোনো অংশে নতুন কোষ তৈরি করা যায়। তিনি বলছেন মানব ক্লোন থেকে তৈরি স্টেম সেল মানের দিক থেকে অনেক ভাল এবং এধরনের চিকিৎসার জন্য অনেক বেশি ফলপ্রসূ হয়- তার কথায় স্টেম সেলের ভ্রুণ অনেকটা পুরো চার্জ দেওয়া ব্যাটারির মত এবং এমনকী ৯০ বছরের বৃদ্ধের শরীরের কোনো ক্ষয়প্রাপ্ত বা অসুস্থ কোষের জায়গায় প্রতিস্থাপন করার জন্য স্টেম সেল নতুন জীবন সঞ্চারের ভূমিকা পালন করতে পারে। স্টেম সেল পদ্ধতি চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য নতুন আশার আলো। হৃদরোগে নষ্ট হওয়া মাংসপেশীর পুনরুদ্ধার থেকে শুরু করে ভাঙা মেরুদন্ড সারিয়ে তোলার চিকিৎসায় স্টেম সেলের ব্যবহার আগামীতে একটা বিশাল ভূমিকা রাখতে পারবে বলে ড. মেটালিপফের বিশ্বাস।
এখন ইসলাম এই ক্ষেত্রে কি বলে? আর এর সাথে কি ইলুমিনাতির সম্পর্ক আছে? আর সম্পর্কে থাকলে তাতে ইলুমিনাতির উদ্দেশ্য কি? কাফেরদের মিডিয়া বা তাদের মিডিয়াতে প্রচারিত আবিষ্কার যা বিশ্বের বিভিন্ন বইগুলোতে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পর্কে পড়ানো হয় তার সাথে কি নাসার চন্দ্র, মঙ্গল গ্রহ অভিযানের মত কি কোন ভণ্ডামি আছে কি? বা তাতে কি বিজ্ঞানের নামে কোন অপবিজ্ঞান শিখানো হচ্ছে যা ভবিষ্যতে পারমাণবিক বোমার মতই মানবজাতির ধ্বংস নিয়ে আসবে?নাকি এটা এলিয়েন নাটকের মতই ইবলিশী জীনদের কারসাজি যাদের সাথে দাজ্জালের সম্পর্ক? ভাবতে থাকুন। পরবর্তী কোন পার্টে হ্যতো ক্লোনিং এর ভয়াবহ সব ষড়যন্ত্র তুলে ধরব।
No comments:
Post a Comment