দাজ্জাল সম্পর্কে ইবনে সায়্যাদের সংক্ষিপ্ত আলোচনা করাটা সঙ্গত বলে মনে করি। ইবনে সায়্যাদ একজন ইহুদি ছিল। লোকটি মদিনায় বাস করত। তার আসল নাম ছিল ‘সাফ’। সে জাদু ও ভেলকিবাজিতে খুব পারদর্শী ছিল। দাজ্জালের মধ্যে যে সব লক্ষন থাকার কথা রয়েছে, তার মধ্যে তার অনেকাংশই পাওয়া যেত। এ কারণে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও ইবনে সায়্যাদের ব্যাপারে চিন্তিত থাকতেন এবং তার পরিচয় জানতে একাধিকবার তার কথাবার্তা শুনবার চেষ্টা করেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত তার সম্পর্কে কোন সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেননি যে, ইবনে সায়্যাদই দাজ্জাল কিনা। অনুরূপভাবে শীর্ষস্থানীয় অনেক সাহাবীও ইবনে সায়্যাদকেই দাজ্জাল মনে করতেন। এখানে এ সংক্রান্ত কয়েকটি হাদিস উদ্ধৃত করছি।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদিন হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) একদল সাহাবার সঙ্গে যুক্ত হয়ে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে ইবনে সায়্যাদ এর নিকট গেলেন। তিনি তাকে বনু মাগালায় (ইহুদি একটি পল্লীতে) ক্রীড়ারত অবস্থায় পেলেন। বয়সে তরুণ। ইবনে সায়্যাদ তাদের গমনের সংবাদ টের পেল না। এমনকি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার পিঠে হাত রাখলেন।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি সাক্ষ্য দিচ্ছ যে, আমি আল্লাহর রাসূল?
প্রশ্নটি শুনে ইবনে সায়্যাদ অত্যন্ত ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পানে তাকাল এবং বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, তুমি অজ্ঞ লোকদের রাসূল। তারপর সে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করল, তুমি কি সাক্ষ্য দিচ্ছ যে, আমি আল্লাহর রাসূল?
উত্তরে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে ধরে সজোরে চাপ দিলেন এবং বললেন, আমি আল্লাহর উপর ও তার রাসুলগনের উপর ঈমান এনেছি। তারপর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, বলো তো তুমি কি দেখছো? অর্থাৎ অদৃশ্য বস্তুসমূহের মধ্যে তুমি কি কি দেখতে পাও? সে বলল, কখনও তো আমার কাছে সঠিক সংবাদ আসে, আবার কখনও মিথ্যা আসে।
একথা শুনে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমার পুরো বিষয়টিই এলোমেলো হয়ে গেছে। তারপর বললেন, আমি তোমার জন্য হৃদয়ে একটি কথা লিকিয়ে রেখেছি।
সে বলল, সেই গোপন বিষয়টি হল ধোঁয়া।
একথা শুনে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, দূর হও, তুমি তোমার সময় হতে একটুও অগ্রসর হতে পারবে না।
এই পরিস্থিতিতে হযরত ওমর (রাঃ) বলে উঠলেন, হে আল্লাহর রাসূল, অনুমতি দিন, আমি ওর ঘাড়টা উড়িয়ে দেই।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ইবনে সায়্যাদ যদি সেই দাজ্জাল হয়, তা হলে তুমি তাকে হত্যা করতে পারবে না, আর যদি সে না হয়, তাহলে একে হত্যা করে কোন লাভ নেই।
ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, একদিন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খেজুরের সেই গাছগুলোর কাছে গমন করলেন, যেখানে ইবনে সায়্যাদ অবস্থান করছিল। তখন উবাই ইবনে কাব আনসারী (রাঃ) নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গী ছিলেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওখানে পৌঁছে কতগুলো খেজুর ডালের পিছনে লুকোতে শুরু করলেন, যাতে ইবনে সায়্যাদ টের পাওয়ার আগেই তিনি তার কিছু কথা শুনে নিতে পারেন। ইবনে সায়্যাদ তার গাঁয়ে চাদর মুড়িয়ে শুয়ে ছিল এবং ভিতর থেকে গুনগুনানির শব্দ আসছিল। এই সময় ইবনে সায়্যাদের মা খেজুর ডালের আড়ালে লুকিয়ে থাকা নবীজিকে দেখে ফেলল এবং বলে উঠল, হে ছাফ, এই যে মোহাম্মদ এসেছে।
শুনে ইবনে সায়্যাদ গুনগুনানি বন্ধ করে দিল। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ওর মা যদি ওকে সতর্ক না করত, তা হলে আজ সে তার আসল রূপ প্রকাশ করে দিত।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, এই ঘটনার পর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন খুতবা দিতে জনতার সামনে দাড়ালেন, তখন তিনি মহান আল্লাহর যথাযথ প্রশংসা জ্ঞাপন করলেন। তারপর দাজ্জালের আলোচনা করলেন। তিনি বললেন, ‘আমি তোমাদেরকে দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করছি। নূহ এর পরে এমন কোন নবী অতিবাহিত হননি, যারা দাজ্জাল সম্পর্কে আপন জাতিকে সতর্ক করেননি। নূহও তার জাতিকে দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। তবে আমি তোমাদেরকে দাজ্জাল সম্পর্কে এমন একটি কথা বলতে চাই, যা ইতিপূর্বে কোন নবী বলেননি। তোমরা জেনে রাখো, দাজ্জাল হবে কানা আর নিশ্চিত জানো, আল্লাহ কানা নন’। (সহিহ বুখারি, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ১১১২; সহিহ মুসলিম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ২২৪৪)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, একদিন রাস্তায় ইবনে সায়্যাদের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। সে সময় তার চোখ ফোলা ছিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তোমার চোখে এই ফোলা কবে থেকে? সে বলল, আমার জানা নেই। আমি বললাম, চোখ হল তোমার মাথায় আর তুমি জান না? সে বলল, আল্লাহ চাইলে এই চোখটি তোমার লাঠিতে সৃষ্টি করে দিতে পারেন। ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, এই কথোপকথনের পর ইবনে সায়্যাদ তার নাক থেকে সজোরে এমন একটি শব্দ বের করল, যা গাধার শব্দের মতো ছিল’। (সহিহ মুসলিম, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৯৮)
হযরত মুহাম্মদ ইবনে মুনকাদির তাবেয়ী (রহঃ) বলেন, আমি হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) কে দেখেছি যে, তিনি কসম খেয়ে বলতেন, ইবনে সায়্যাদ দাজ্জাল। আর নবীজি তা অস্বীকার করেননি। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৬৯২২; সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২৯২৯)
হযরত নাফে’ (রহঃ) বলেন, ইবনে ওমর (রাঃ) বললেন, আল্লাহর শপথ, আমার এতে কোন সন্দেহ নেই যে, ইবনে সায়্যাদই দাজ্জাল। ইমাম আবু দাউদ ও বায়হাকী এই বর্ণনাটি উদ্ধৃত করেছেন। ইমাম আবু দাউদ ও বায়হাকী মাজাহিবে হক জাদীদ-এর সূত্রে ‘কিতাবুল বাছি ওয়ান নুশূর’ এই বর্ণনাটি উদ্ধৃত করেছেন।
হযরত আবু বাকরাহ (রাঃ) বর্ণনা করেন, একদিন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, দাজ্জালের পিতামাতা ত্রিশ বছর যাবত এমন অবস্থায় অতিবাহিত করবে যে, তাদের কোন সন্তান জন্মাবে না। ত্রিশ বছর পর তাদের ঘরে একটি পুত্র সন্তান জন্ম নেবে, যার বড় বড় দাঁত থাকবে। সে অল্প উপকারী হবে। তার চোখ দুটো ঘুমবে বটে; কিন্তু অন্তর ঘুমবে না।
এটুকু বলার পর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের সামনে তার পিতামাতার অবস্থা বর্ণনা করলেন এবং বললেন, তার পিতা অস্বাভাবিক দীর্ঘাকায় হবে এবং শরীরে গোশত কম হবে। তার নাক মোরগের চক্ষুর মতো (লম্বা ও সরু) হবে। তার মা হবে মোটা, চওড়া ও দীর্ঘ হাতের অধিকারী।
আবু বাকারাহ (রাঃ) বলেন, আমরা মদিনার ইহুদীদের মাঝে একটি (বিরল ও বিস্ময়কর) ছেলের উপস্থিতির কথা শুনলাম। তখন আমি ও জুবাইর ইবনে আওয়াম তাকে দেখতে গেলাম। আমরা ছেলেটির পিতামাতার কাছে পৌঁছে দেখলাম, তারা হুবহু তেমন, যেমনটি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেছেন। আমরা তাদেরকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমাদের কোন পুত্র সন্তান আছে কি? তারা বলল, আমরা ত্রিশটি বছর এভাবে অতিবাহিত করলাম যে, আমাদের কোন পুত্রসন্তান জন্মায়নি? পরে আমাদের ঘরে একটি কানা পুত্র সন্তান জন্মাল, যার দাঁতগুলো বড় বড় এবং কম হিতকর। তার চোখ দুটো ঘুমায় বটে, কিন্তু অন্তর ঘুমায় না।
আবু বাকারাহ (রাঃ) বলেন, আমরা ওখান থেকে বিদায় নিয়ে এলাম। এবার হঠাৎ উক্ত ছেলেটির উপর আমাদের দৃষ্টি পতিত হল। ছেলেটি রোদের মধ্যে গাঁয়ে চাদর জড়িয়ে পড়ে ছিল এবং চাদরের মধ্য থেকে এমন এক গুনগুনানির শব্দ আসছিল, যার কোন মর্ম বোঝা যাচ্ছিল না। আমরা ওখানে দাঁড়িয়ে পরস্পর কথা বলতে শুরু করলাম। হঠাৎ ছেলেটি মাথা থেকে চাদর সরিয়ে আমাদেরকে জিজ্ঞেস করল, তোমরা কি বলছ? আমরা বিস্মিত হয়ে বললাম, তুমি কি আমাদের কথা শুনে ফেলেছ? সে বলল, হ্যাঁ, আমার চোখ ঘুমায়, কিন্তু অন্তর ঘুমায় না। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস নং ২২৪৮)
হযরত আবু সাইদ খুদরি (রাঃ) বলেন, একবার মক্কার সফরে আমার ও ইবনে সায়্যাদের সাক্ষাত হল। সে আমাকে তার সেই কষ্টের কথা ব্যক্ত করল, যা লোকদের দ্বারা সে পেয়েছিল। বলল, মানুষ আমাকে দাজ্জাল বলে। আবু সাঈদ, তুমি কি রাসুল (সাঃ) কে বলতে শুননি, দাজ্জালের কোন সন্তান হবে না; অথচ আমার একাধিক সন্তান আছে? নবীজি (সাঃ) কি একথা বলেননি যে, দাজ্জাল কাফের হবে, অথচ আমি মুসলমান। তিনি কি একথা বলেননি যে, দাজ্জাল মদীনা ও মক্কায় প্রবেশ করবে না, অথচ আমি মদিনা থেকে এসেছি এবং মক্কায় যাচ্ছি?
আবু সাঈদ (রাঃ) বলেন, ইবনে সায়্যাদ আমাকে সর্বশেষ কথাটি এই বলেছে যে, মনে রেখো, আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমি দাজ্জালের জন্মের সময় ও স্থান সম্পর্কে জানি। সে কোথায় আছে, তাও আমি বলতে পারি। তার পিতামাতাকেও চিনি।
আবু সাঈদ খুদরি (রাঃ) বলেন, ইবনে সায়্যাদের এসব কথা শুনে আমি সন্দেহে পড়ে গেলাম। আমি বললাম, তুমি আজীবনের জন্য ধ্বংস হও। সে সময় উপস্থিত লোকদের একজন জিজ্ঞেস করল, তোমার কি এটা পছন্দ হবে যে, তুমিই দাজ্জাল? উত্তরে সে বলল, হ্যাঁ, দাজ্জালের যত গুন আছে, যদি তার সবগুলো আমাকে দেওয়া হয়, তাহলে আমি মন্দ ভাবব না। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২৯২৭)
হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ বলেন, ইবনে সায়্যাদ হাররার ঘটনার সময় অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল। পরে আর কোন দিন ফিরে আসেনি। (সুনানে আবু দাউদ, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৫৯৫)
দাজ্জালের অবস্থানে সময় থেমে যাবে কি?
সময়ের থেমে যাওয়া দাজ্জালের জাদুর ক্রিয়া হবে কিংবা সে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে এমনটি করবে। কেননা, সাহাবা কিরাম যখন জিজ্ঞেস করলেন, “হে আল্লাহর রাসুল, এই অবস্থায় আমরা নামাজ কত ওয়াক্ত পড়ব? তখন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তর দিয়েছিলেন, সময় অনুমান করে নামাজ আদায় করতে থাকবে।
দাজ্জালি শক্তিগুলো সময়ের গতিকে রোধ করার লক্ষ্যে অনবরত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আপনি হয়তো শুনে থাকবেন, ‘টাইম মেশিন’ নামে এমন একটি প্রযুক্তি আবিস্কারের চেষ্টা চলছে, যার সাহায্যে মানুষকে বিগত সময়ে পৌঁছে দেওয়া যায়। মানুষ মূলত বর্তমান সময়েই অবস্থান করবে; কিন্তু মেশিনটির সাহায্যে মনে হবে, এখনও বিগত সময়ের মধ্যেই রয়েছে। এর স্পষ্ট চিত্র হয়তো শীঘ্রই বিশ্ববাসীর সামনে চলে আসবে।
সাহাবাগনের দাজ্জালের গতি ও দুনিয়াতে তার অবস্থানের মেয়াদকাল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা তাদের সামরিক চিন্তার প্রমাণ বহন করে। প্রশ্নটি করে তারা জানতে চেয়েছিলেন, আমাদেরকে দাজ্জালের সাথে কতদিন যুদ্ধ করতে হবে। যেহেতু যুদ্ধে চলাচল এবং দৌড়ঝাঁপ একটি অতিশয় গুরুত্তপূর্ন বিষয়, তাই তারা জিজ্ঞেস করেছিলেন, দাজ্জালের গতি কেমন হবে?
দাজ্জালের মেয়াদকালের প্রথম দিনটি এক বছরের সমান হবে। দ্বিতীয় দিনটি এক মাসের সমান হবে আর তৃতীয় দিনটি দিনটি হবে এক সপ্তাহের সমান। অবশিষ্ট ৩৭ দিন সাধারণ দিবসের মতো হবে। এই হিসাবে দাজ্জালের দুনিয়াতের অবস্থানের মেয়াদকাল এক বছর দুই মাস চৌদ্দ দিনের সমান হয়।
একদিন এক বছরের সমান হবে। কোন কোন বিশ্লেষক দিবসের দীর্ঘ হওয়ার অর্থ এই লিখেছেন যে, পেরেশানির কারণে দিনটি দীর্ঘ বলে মনে হবে।কিন্তু মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যাকার ইমাম নববি (রহঃ) লিখেছেন, হাদিস বিশেষজ্ঞদের মতে হাদিস দ্বারা বাহ্যত যা বোঝা যাচ্ছে, বাস্তবে তা-ই এর মর্ম। অর্থাৎ প্রথম তিনটি দিন এতটাই দীর্ঘ হবে, যা হাদিসে বলা হয়েছে। অবশিষ্ট দিনগুলো সাধারণ দিনেরই মতো হবে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই উক্তিই তার প্রমাণ বহন করে। তা ছাড়া সাহাবা কিরাম এই যে প্রশ্ন করেছেন, “ উক্ত দিনগুলোতে আমরা নামাজ কত ওয়াক্ত পড়ব আর তখন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তর দিয়েছিলেন, সময় হিসাব করে নামাজ আদায় করবে” – এ বিষয়টিও প্রমাণ করে যে, এখানে প্রকৃত দীর্ঘতা-ই বোঝানো হয়েছে।
‘দাজ্জাল তার ডানে ও বাঁয়ে অনাচার ও বিপর্যয় ছড়াতে থাকবে’ – একথার অর্থ হল, সে যেখানেই যাবে, সেখানেই অনাচার ও বিপর্যয় তৈরি হবে। তার ডানে বাঁয়ে তার এজেন্টরা বিপর্যয় তৈরি করতে থাকবে। যেমনটি আমরা এখনও দেখতে পাচ্ছি যে, প্রধান সেনাপতি বিশেষ বিশেষ জায়গায় যান। অবশিষ্ট জায়গাগুলোতে তার অধীনদের পাঠিয়ে দেন। এই দাবীর পক্ষে সেই বর্ণনাগুলো প্রমাণ বহন করছে, যেগুলোতে বলা হয়েছে, দাজ্জাল যখন এক যুবক সম্পর্কে সংবাদ পাবে, সে তাকে মন্দ বলছে, তখন সে তার লোকদেরকে বার্তা পাঠাবে, অমুক যুবককে ধরে আমার কাছে নিয়ে আসো। নুআঈম ইবনে হাম্মাদ ‘আলফিতানে’ এই বর্ণনাটি উল্লেখ করেছেন। এর দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে, দাজ্জাল ছাড়াও তার লোকেরা মুমিনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্যাপৃত থাকবে আর দাজ্জাল স্থানে স্থানে গিয়ে তাদের দেখভাল করবে।
No comments:
Post a Comment