হযরত আবু বাকরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “দাজ্জালের প্রভাব মদিনায় প্রবেশ করবে না। সে সময় মদিনায় সাতটি ফটক থাকবে। প্রতিটি ফটকে দুজন করে ফেরেশতা নিয়োজিত থাকবে”। (সহিহ বুখারি, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১০৫৫)
আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “এমন কোন নগরী নেই যেখানে দাজ্জাল প্রবেশ করবে না – দুই পবিত্র নগরী মক্কা ও মদিনা ব্যতীত। মদিনার প্রতিটি প্রবেশ দ্বারে সেদিন দুজন করে ফেরেশতা থাকবে, যারা তার থেকে দাজ্জালের প্রভাবকে প্রতিহত করবে”। (মুসতাদরাকে হাকেম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫৮৪)
হযরত মিহজান ইবনে আদরা (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন জনতার উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন। তাতে তিনি তিনবার বলেছেন, “ইয়াওমুল খালাসি ওয়ামা ইয়াওমুল খালাসি”।
এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, ‘হে আল্লাহর রাসুল, ‘ইয়াওমুল খালাস’ কি জিনিস?
উত্তরে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“দাজ্জাল আসবে এবং অহুদ পাহাড়ের উপর আরোহণ করবে। তারপর তার সাথীদের বলবে, তোমরা কি ঐ শাদা ভবনটি দেখতে পাচ্ছ? এটি আহমদ-এর মসজিদ। তারপর সে মদিনার দিকে এগিয়ে আসবে। সে তার প্রতিটি পথে খাপখোলা তরবারি হাতে একজন ফেরেশতাকে দণ্ডায়মান দেখতে পাবে। সে সাফখাতুল জুরুফের দিকে যাবে এবং নিজ তাঁবুর গাঁয়ে আঘাত হানবে। তারপর মদিনা তিনটি কম্পনে প্রকম্পিত হবে, যার ফলে প্রত্যেক মুনাফিক পুরুষ ও নারী, ফাসেক পুরুষ ও নারী মদিনা থেকে মুক্ত হয়ে যাবে। এটিই হল ‘ইয়াওমুল খালাস’ বা ‘মুক্তির দিন’”। (মুসতাদরাকে হাকেম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫৮৬)
দাজ্জাল মসজিদে নববীকে ‘শাদা ভবন’ আখ্যা দিবে। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে সময় একথাটি বলেছিলেন, তখন মসজিদে নববী সম্পূর্ণ শাদা মাটির তৈরি ছিল। আর এখন যদি মসজিদে নববীকে দূর থেকে কিংবা কোন উঁচু জায়গা থেকে দেখা হয়, তাহলে অন্যান্য ইমারতের মাঝে তাকে পুরোপুরি একটি শাদা ভবনের মতোই মনে হয়। স্যাটেলাইটের সাহায্যে মসজিদে নববীর একটি চিত্র ধারণ করা হয়েছিল। তাতে মসজিদকে শাদা-ই দেখা যাচ্ছে।
অপর এক বর্ণনায় বলা হয়েছে, দাজ্জালের সময় মদিনায় সাতটি ফটক থাকবে। তো সাত ফটক দ্বারা উদ্দেশ্য মদিনায় প্রবেশের সাতটি পথও হতে পারে। বর্তমানে মদিনা প্রবেশের সাতটি বড় রাস্তা বিদ্যমান রয়েছেঃ
১। জেদ্দা থেকে আসা পথ।
২। মক্কা থেকে আসা পথ।
৩। রাবিগ থেকে আসা পথ।
৪। বিমানবন্দর থেকে আসা পথ।
৫। তাবুক থেকে আসা পথ।
৬ ও ৭। এছাড়া আরও দুটি রাস্তা আছে, মফস্বল অঞ্চল থেকে মদিনায় প্রবেশ করা যায়।
মুমিনদের জন্য খুবই চিন্তার বিষয়।
দাজ্জালের সাথে হযরত তামীমদারি (রাঃ) এর সাক্ষাত
হযরত ফাতেমা বিনতে কায়েস (রাঃ) বর্ণনা করেন, একদিন আমি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এক ঘোষককে ঘোষণা করতে শুনলাম, ‘নামাজ প্রস্তুত’। শুনে আমি মসজিদে চলে গেলাম এবং নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইমামতে নামাজ আদায় করলাম। আমি মহিলাদের সেই সারিটিতে ছিলাম, যেটি পুরুষদের একেবারে পেছনে ছিল।
নামাজ সমাপ্ত করে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিটিমিটি হাসতে হাসতে মিম্বরে উঠে বসলেন এবং বললেন,
‘প্রত্যেকে নিজ নিজ নামাজের স্থানে বসে থাকো’। তারপর বললেন, ‘তোমরা কি জান, আমি তোমাদেরকে কেন সমবেত করেছি?’
সাহাবাগন বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,
‘আল্লাহর কসম, আমি তোমাদেরকে কোন বিষয়ের প্রতি উৎসাহ প্রদান কিংবা ভীতি প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে সমবেত করিনি। আমি তোমাদেরকে একটি ঘটনা শোনাবো। তামীমদারি নামে এক খ্রিষ্টান ছিল। সে আমার কাছে এসে মুসলমান হয়ে গেছে। সে আমাকে একটি ঘটনা বলেছে, যেটি আমি দাজ্জাল সম্পর্কে আগে যা বলেছি, তার অনুরূপ। সে আমাকে বলেছে, আমরা বনু লাখম ও বনু জুজামের ত্রিশজন লোক নিয়ে নৌভ্রমনে বের হয়েছিলাম। সমুদ্রের তরঙ্গ এক মাস যাবত আমাদের নিয়ে দুলতে থাকল। এক পর্যায়ে আমরা একটি দ্বীপে গিয়ে উপনীত হলাম। তখন সময়টা ছিল সন্ধ্যাবেলা। আমরা ছোট ছোট ডিঙ্গিতে করে নেমে দ্বীপের ভেতরে ঢুকে গেলাম। ওখানে আমরা বিস্ময়কর প্রকৃতির একটি প্রাণীর সাক্ষাত পেলাম, যার মাথায় মোটা ও ঘন চুল ছিল। চুলের আধিক্যের কারণে আমরা বুঝতে পারিনি, প্রাণীটি আসলে কি।
আমরা বললাম, তোমার ধ্বংস হোক, কে তুমি?
প্রাণীটি বলল, আমি ‘জাসসাসা’।
আমরা জিজ্ঞেস করলাম, ‘জাসসাসা’ কি?
সে বলল, তোমরা গির্জায় সেই লোকটির নিকট যাও, যে তোমাদের সংবাদ নিয়ে খুবই বিচলিত।
প্রাণীটি যখন আমাদের নাম উল্লেখ করল, তখন আমরা ভয় পেয়ে গেলাম যে, ওটা শয়তান কিনা! আমরা তাড়াতাড়ি গির্জায় চলে গেলাম। গিয়ে দেখলাম, ভেতরে বৃহদাকৃতির এমন একজন লোক বসে আছে যে, এমন ভয়ানক মানুষ আমরা এর আগে কখনও দেখিনি। লোকটির হাতদুটো কাঁধ পর্যন্ত আর পা দুটো হাঁটু পর্যন্ত শিকল দ্বারা বাঁধা।
আমরা জিজ্ঞেস করলাম, তোমার ধ্বংস হোক, কে তুমি?
সে বলল, তোমরা যখন আমাকে পেয়েই গেছ আর আমাকে চিনে ফেলেছ, তা হলে বল, তোমরা কারা?
আমরা বললাম, আমরা আরবের লোক।
সে জিজ্ঞেস করল, বায়সানের খেজুর গাছগুলোতে ফল ধরছে কি?
আমরা বললাম, হ্যাঁ, ধরছে তো।
সে বলল, সেই সময়টি নিকটে, যখন সেগুলোতে ফল ধরবে না। তারপর জিজ্ঞেস করল, তারবিয়া উপসাগরে পানি আছে কি?
আমরা বললাম, হ্যাঁ, আছে।
সে বলল, অদূর ভবিষ্যতে তার পানি শুকিয়ে যাবে। তারপর সে জিজ্ঞেস করল, জুগার কূপের অবস্থা কি? তাতে পানি আছে কি? তার পার্শ্ববর্তি মানুষ সেই পানি দ্বারা কৃষিকাজ করছে কি?
আমরা বললাম, হ্যাঁ।
তারপর জিজ্ঞেস করল, নিরক্ষর লোকদের নবী সম্পর্কে বল; তিনি কি করেছেন?
আমরা বললাম, তিনি মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় চলে গেছেন।
সে জিজ্ঞেস করল, আরবরা তাঁর সঙ্গে যুদ্ধ করেছে কি?
আমরা বললাম, হ্যাঁ, করেছে।
সে জিজ্ঞেস করল, তিনি আরবদের সঙ্গে কীরূপ আচরণ করেছেন?
তামীমদারি জানায়, আমরা তাকে পুরো ঘটনা শোনলাম যে, আরবে যারা সজ্জন ছিল, তিনি তাদের জয় করে নিয়েছেন এবং তাঁর আনুগত্য মেনে নিয়েছে।
শুনে লোকটি বলল, তাঁর আনুগত্য মেনে নেওয়াই ভালো। এবার আমি তোমাদেরকে আমার ইতিবৃত্ত বলছি। আমি মাসিহ (দাজ্জাল)। অচিরেই আমাকে আত্মপ্রকাশের আদেশ দেওয়া হবে। আমি বাইরে বের হব এবং সমগ্র পৃথিবী ভ্রমণ করব। এমনকি আমি এমন কোন জনবসতি বাদ রাখব না, যেখানে আমি প্রবেশ করব না। চল্লিশ রাত একটানা ঘুরতে থাকবো। কিন্তু মক্কা ও মদিনায় যাব না। ওখানে যেতে আমাকে বারন করা হয়েছে। আমি যখন তার কোনটিতে ঢুকতে চেষ্টা করব, তখন একজন ফেরেশতা তরবারি হাতে নিয়ে আমাকে প্রতিহত করবে। ওই শহরগুলোর প্রতিটি সড়কে ফেরেশতা মোতায়েন থাকবে’।
এই ঘটনা শোনানোর পর আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাতের লাঠি দ্বারা মিম্বরের উপর আঘাত করে বললেন, ‘ এই হল তায়্যেবা – এই হল তায়্যেবা; মানে মদিনা’। তারপর তিনি বললেন, ‘শোন, আমি তোমাদেরকে এই বিষয়টিই বলতাম। মনে রেখো, মনে রেখো, দাজ্জাল শাম কিংবা ইয়েমেনের কোন সাগরে নেই। সে পূর্বের কোন একস্থানে আছে। সে পূর্বের কোন একস্থানে আছে। সে পূর্বের কোন একস্থানে আছে’। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫২৩৫)
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনবার বলেছেন, “সে পূর্বের কোন একস্থানে আছে”।
এব্যাপারে আলেমগন বলেছেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আগে অভিহিত করেছিলেন যে, দাজ্জাল প্রাচ্যে আছে। একারণে তিনি পূর্বের তথ্যটি করে নিয়ে পরের তথ্যটি তিনবার উচ্চারন করেছেন। তিনি এপর্যন্তই সীমাবদ্ধ রাখলেন এবং দাজ্জালের অঞ্চল ও অবস্থানকে আর বেশি চিহ্নিত করলেন না। তাই এখানেই আলোচনার ইতি টানা হচ্ছে।
দাজ্জাল বিষয়ে ইরাক সম্পর্কে একটি বিস্ময়কর বর্ণনা
হায়ছাম ইবনে মালেক আত-তায়ী বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“দাজ্জাল দুই বছর ইরাক শাসন করবে। তাতে তার সুশাসন প্রশংসিত হবে এবং মানুষ তার দিকে ধাবিত ও আকৃষ্ট হবে। দুই বছর পর একদিন সে মঞ্চে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিবে। তখন জনতাকে উদ্দেশ্য করে সে বলবে, এখনও কি সময় আসেনি, তোমরা তোমাদের প্রভুর পরিচয় লাভ করবে? এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করবে, আমাদের প্রভু কে? দাজ্জাল বলবে, আমি। আল্লাহর এক বান্দা তার এই দাবি প্রত্যাখ্যান করবে। দাজ্জাল তাকে হত্যা করে ফেলবে”। (আল ফিতান, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৫৩৯)
ইমরান ইবনে হুসাইন বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে-ই দাজ্জালের আবির্ভাবের সংবাদ শুনবে, সে-ই যেন তার থেকে দূরে থাকে। আল্লাহর শপথ, এমন ঘটনা ঘটবে যে, কোন লোক এমন অবস্থায় তার কাছে আসবে, সে নিজেকে মুমিন ভাবছে, কিন্তু এসে তার কর্মকাণ্ডে সন্দেহে নিপাতিত হয়ে তার অনুসারী হয়ে যাবে”। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৩৭৬২)
দাজ্জালের ফেতনা সম্পদ, সৌন্দর্য ও শক্তি – মোট কথা সব বিষয়ে হবে। আর জগত তার সবটুকু সৌন্দর্য নিয়ে শহরে নগরে অবস্থান করে থাকে। যে অঞ্চল শহর থেকে যত দূরে হবে, সেখানে দাজ্জালের ফেতনা তত কম হবে। উম্মে হারামের হদিসেও এ বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে। উক্ত হাদিসে বলা হয়েছে, মানুষ দাজ্জাল থেকে এত পলায়ন করবে যে, তারা পাহাড়ে চলে যাবে।
দাজ্জাল কোথা থেকে আত্মপ্রকাশ করবে?
ইসহাক ইবনে আব্দুল্লাহ বর্ণনা করেন, আমি আনাস ইবনে মালেককে বলতে শুনেছি, “ইস্ফাহানের সত্তর হাজার ইহুদী দাজ্জালের অনুসারী হবে। তাদের গায়ে সবুজ বর্ণের চাদর (বা জুব্বা) থাকবে”। (সহিহ মুসলিম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ২২৬৬)
যেমনটি পেছনে বলে এসেছি, ইসরাইলে বিশেষ এক ধরনের পোশাক তৈরির কাজ চলছে, যেগুলো তাদের ধর্মনেতারা দাজ্জালের আবির্ভাবের পর পরিধান করবে।
হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, একদিন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার নিকট আগমন করলেন। আমি তখন বসে বসে কাঁদছিলাম। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমার দাজ্জালের কথা মনে পড়ে গেছে। শুনে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,
“যদি সে আমার জীবদ্দশায় আত্মপ্রকাশ করে, তা হলে তোমার পক্ষে আমিই যথেষ্ট হব। আর যদি আমার পরে আত্মপ্রকাশ করে, তবুও তোমার আতঙ্কিত হওয়ার কনো প্রয়োজন নাই। কেননা, তার মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে কানা হবে আর তোমার রব কানা নন। সে ইস্ফাহানের ইহুদিয়া নামক অঞ্চল থেকে আত্মপ্রকাশ করবে”। (মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ১৭৫)
হযরত আমর ইবনে হুরাইছ হযরত আবুবকর সিদ্দিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “দাজ্জাল পৃথিবীর এমন একটি অঞ্চল থেকে আত্মপ্রকাশ করবে, যেটি প্রাচ্যে অবস্থিত এবং যাকে খোরাসান বলা হয়। তার সঙ্গে অনেক দল মানুষ থাকবে। তাদের একটি দলের লোকদের চেহারা স্ফীত ঢালের মতো হবে”। (মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৭; সুনানে ইবনে মাজা, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১৩৫৩; মুসনাদে আবু ইয়ালা, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৭)
দাজ্জালের সঙ্গে এমন একদল মানুষ থাকবে, যাদের মুখমণ্ডল এরূপ স্ফীত ঢালের মতো হবে। প্রশ্ন হল, সত্যিই কি তাদের মুখমণ্ডল এরূপ হবে? নাকি তারা কিছু পরিধান করে তাদের মুখমণ্ডল এরূপ বানিয়ে রাখবে? কোনটি সঠিক আল্লাহই তা ভালো জানেন।
এই হাদিসে খোরাসানকে দাজ্জালের আবির্ভাবের স্থান বলা হয়েছে। এর আগের বর্ণনায় বলা হয়েছে ইস্ফাহান। এই দুই বর্ণনায় মূলত কোন বিরোধ নেই। কারণ, ইস্ফাহান ইরানের একটি প্রদেশ আর ইরান একসময় খোরাসানের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
খোরাসান সম্পর্কে সেই বাহিনীর বর্ণনাও আছে, যারা ইমাম মাহদির সহায়তার আগমন করবে। কাজেই আমরা যদি মাহদি বাহিনীর লক্ষনগুলো সমগ্র খোরাসানে অনুসন্ধান করি, তাহলে তা আফগানিস্তানের সেই ভূখণ্ডটিতে পরিদৃষ্ট হবে, যেখানে বর্তমানে পাখতুন বসতি বেশি। তাই লক্ষনদৃষ্টে বলা যায়, হযরত মাহদির সহায়তাকারী বাহিনীটি খোরাসানের সেই অঞ্চল থেকে গমন করবে, যেটি বর্তমানে তালেবান আন্দোলনের ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত।
অপর এক বর্ণনায় দাজ্জালের আবির্ভাবস্থল হিসাবে ইরাক ও শামের মধ্যবর্তী একটি জায়গার কথা বলা হয়েছে। ফলে এখানে বাহ্যত বিরোধ পরিলক্ষিত হচ্ছে। এই বিরোধের সমাধান হল, দাজ্জালের আগমন ইস্ফাহান থেকেই ঘটবে। তবে তার প্রচার ও খোদায়ী দাবীর ঘটবে ইরাকে। এই হিসাবেও একে “আবির্ভাব” নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
এখানে দাজ্জালের আত্মপ্রকাশের স্থান ইস্ফাহানের ইহুদিয়া নামক একটি জায়গার কথা বলা হয়েছে। বুখতেনাচ্চর যখন বাইতুল মুকাদ্দাসের উপর আক্রমণ চালিয়েছিল, তখন বহু সংখ্যক ইহুদি এই অঞ্চলে এসে বসতি স্থাপন করেছিল। সেই থেকে এই অঞ্চলের নাম হয়েছে ইহুদিয়া। ইহুদীদের মাঝে ইস্ফাহানের একটি বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। এক হাদিসে বলা হয়েছে, দাজ্জালের সঙ্গে সত্তুর হাজার ইহুদি থাকবে।
No comments:
Post a Comment