অনেক বোনের প্রশ্ন,ইমাম মাহদী আসলে আমরা কী করব? মেয়েদের কী জিহাদের অনুমতি আছে?? আজকের আলোচনা সেই বোনদের সহ সকল মুসলিম বোনের উদ্দেশ্যে।
হযরত আবু উমামা বাহেলি (রাঃ) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসূল (সা:) বলেছেন,
“ইসলামের কড়াগুলো একটি একটি করে ভেঙ্গে যাবে। একটি ভেঙ্গে যাওয়ার পর মানুষ তার পরেরটি আঁকড়ে ধরবে। তো সর্বপ্রথম যে কড়াটি ভাঙবে, সেটি হল ইসলামী শাসন। আর সর্বশেষটি হল নামাজ”।
(সু’আবুল ইমান খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ২৩৬; আল মু’জামুল কাবীর খণ্ড ৮, পৃষ্ঠা ৯৮; মাওয়ারিদুয যাম’আন খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৮৭)
অর্থাৎ মুসলিম জাতি অধঃপতনের ধারাবাহিকতায় সর্বপ্রথম যে বিষয়টি পরিত্যাগ করবে, সেটি হল ইসলামী শাসন। আল্লাহপাকের ঠিক করে দেওয়া যাবতীয় হক আদায় করা, যতসব ফরজ আদায় করা এবং ইসলামের দণ্ডবিধির অনুসরণ করা। এই সবগুলি বিষয় ইসলামী খেলাফতের অধীনে অত্যন্ত সুন্দর ও সুচারুরূপে বাস্তবায়িত হয়। কাজেই ইসলামী শাসননীতি অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়।
মোটকথা, মুসলমানের জীবন থেকে সর্বপ্রথম যে বিষয়টি হারিয়ে যাবে বলে আল্লাহর রাসূল (সা:) ভবিষ্যৎবাণী করেছেন, সেটি হল খেলাফত।
যদি খেলাফতে উসমানিয়ার পতনের (১৯২৪ সাল) এর পর থেকে এ সময় পর্যন্তকার ইতিহাস অধ্যায়ন করা হয়, তাহলে সুস্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা ও সভ্যতা সংস্কৃতির সংরক্ষণ আমাদের ঘরগুলোরই মাধ্যমে আঞ্জাম দেওয়া হয়েছে এবং এই ঘরগুলোই মুসলিম সমাজকে এই পর্যন্ত টিকিয়ে রেখেছে। বহু মুসলিম ভূখণ্ডে এমনও ঘটেছে যে, এই সর্বশেষ দুর্গটি ছাড়া মুসলমানদের কাছে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকেনি। এমনকি মসজিদ মাদ্রাসাগুলো পর্যন্ত কাফেরদের দখলে চলে গিয়েছিল। কিন্তু এই দুর্গগুলোতে অবস্থানরত ইসলামী বাহিনীগুলো সাহস হারায়নি এবং নিজ নিজ রণাঙ্গনে দৃঢ়পদে টিকে রয়েছে।
ইসলামের এই দুর্গগুলোতে যে বাহিনী আছে, তারা হল মুসলিম নারীদের বাহিনী, যারা ইসলামের জন্য সেই মহান কীর্তি আঞ্জাম দিয়েছে, যা ইসলামবিরোধীদের হাজার প্রচেষ্টার পর আজও অটুট রয়েছে। বর্তমানে মুসলিম জাতি যে পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে, তা মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি। কাজেই এই পরিস্থিতিতে মুসলিম মহিলাদের দায়িত্বও আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। ঈমানদার মা ও বোনদেরকে এখন আগের তুলনায় বেশি সচেতনতা, সাহসিকতা ও পরিশ্রমের সঙ্গে আপন দায়িত্ব পালন করতে হবে। ইসলামের প্রাথমিক যুগে,স্বর্ণযুগে কিংবা ক্রুসেডের যুদ্ধে, আলহামরার দূর্গে গাদ্দারদের শত ইসলামবিরোধী চক্রান্তের মাঝেও মুসলিম জাতির রত্নগর্ভা মায়েরা-বোনেরা যে দুঃসাহসী ভূমিকা পালন করেছিলেন সেই ভূমিকা এখন থেকেই আপনাদের পালন করতে হবে।
ইসলামের শত্রুরা আপনার মোকাবেলায় একনাগাড়ে ৯০ বছর যাবত পরাজয় বরণ করে আসছে। এসব পরাজয় থেকে তারা এই ফলাফলে উপনীত হয়েছে যে, মোকাবেলা করে এই বাহিনীটির বিরুদ্ধে জয়ী হওয়া যাবে না – আমাদেরকে অন্য কৌশল অবলম্বন করতে হবে। এবার তারা যে কৌশলটি অবলম্বন করেছে, তা হল মুসলমানদের ঘরগুলোতে যে ইসলামী বাহিনীটি অবস্থান নিয়ে আছে, তাদেরকে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য থেকে উদাসীন করে দিতে হবে। এই কৌশলটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অনেকগুলো মনোমুগ্ধকর শ্লোগান নিয়ে দরদী বন্ধুর রূপ ধারণ করে তারা আপনার সামনে এসে হাজির হয়েছে। নারী-পুরুষ সমান অধিকারের চকমকে চোরাবালিতে নিমজ্জিত করে নারীদের থেকে তাদের শেষ সম্মানটুকুও কেড়ে নেয়া হচ্ছে। ক্ষমতায়নের নামে নারীদের ঘরের বাইরে টেনে এনে সস্তা পণ্যে পরিণত করা হচ্ছে।
আপনার সামনে ছড়িয়ে দিয়েছে নানা বিলাসিতার উপকরণ, চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য আর রূপের সামগ্রী, আপনার মস্তিষ্ক ধোলাই করছে পরকীয়া-অবৈধ প্রেমের রঙ্গিন জগৎ 'সিরিয়াল' নামক নীরব ঘাতকে। সন্তানের সামনে এসবে ডুবে থেকে আপনি কী করে আপনার সন্তানকে মুজাহিদ বানানোর কথা ভাবছেন??
কাজেই আমার মা ও বোনেরা! সময়ের নাজুকতা ও শত্রুপক্ষের ধোঁকা-প্রতারনা উপলব্ধি করে আপনাদেরকে তাদের মোকাবিলা করতে হবে। আপন দায়িত্ব কর্তব্য থেকে উদাসীন হবেন না। আজকের মুসলমান পুরুষদের বাহিনী, যারা আপন দায়িত্ব থেকে গা বাঁচানোর চেষ্টা করছে, যারা মানসিকভাবে পরাজয়ের শিকার হয়ে আছে, হতাশার কালো মেঘ যাদের ঘিরে রেখেছে, আপনারা মহিলাদেরকে আল্লাহ এই যোগ্যতা দান করেছেন যে, আপনারা পলায়মান এই বাহিনীটিকে সম্মুখপানে এগিয়ে যাওয়ার সাহস জোগাতে পারেন, তাদের অবশ বাহুগুলোতে বিদ্যুৎ সঞ্চারিত করে দিতে পারেন, ভীত সন্ত্রস্ত পুরুষদের মাঝে আত্মপরিচয় ও আত্মমর্যাদাবোধ জাগিয়ে তাদেরকে কর্তব্য পালনের উপযোগী বানিয়ে তুলতে পারেন।
মহান আল্লাহ আপনাদেরকে সত্তাগতভাবেই একটি সংগঠন হিসাবে সৃষ্টি করেছেন। একজন নারী মানেই একটি সংগঠন। একারণে দাজ্জালের ফেতনার বিরুদ্ধে আপনারা অনেক বেশি কাজ করতে পারেন। সেই সাথে আপনাদের অধিক সতর্ক থাকতে হবে কারণ দাজ্জালের ফেতনায় সবথেকে বেশি মহিলারাই পড়বে।
সন্তানদেরকে খাঁটি মুসলমান বানানো এবং তাদেরকে সর্বাবস্থায় ইসলামী নিতি-আদর্শের প্রহরী হিসাবে গড়ে তোলা মহিলাদেরই দায়িত্ব। সন্তানদের মন মস্তিস্ককে শৈশব থেকেই একথাটি বসিয়ে দিতে হবে যে, তার ঈমান জগতের প্রতিটি বস্তুর চেয়ে মূল্যবান। কাজেই ঈমানকে বাঁচিয়ে রাখতে যদি সমগ্র দুনিয়াকেও কুরবান দিতে হয়, তাহলে অকুণ্ঠচিত্তে তাই করতে হবে। তবুও ঈমানের গাঁয়ে আঁচড়টিও লাগতে দেওয়া যাবে না। নারীদের জন্য জিহাদের ময়দান নয়,বরং তাদের দায়িত্ব এক একজন মর্দে মুজাহিদ গড়ে তোলা,যারা আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে শত্রুর অন্তর কাঁপিয়ে তুলবে। তরবারির এক আঘাতেই শত্রুর গর্দান ধূলায় লুটিয়ে দিবে।
হযরত ইমরান ইবনে সুলাইম কালায়ি থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন,
“একজন নারীর নিজ গৃহের মাঝে ছুটে বেড়ানো তার জন্য জুতাজোড়া অপেক্ষা উত্তম। স্থুলাকায়া নারীদের জন্য ধ্বংস অবধারিত। সুসংবাদ গরীব মহিলাদের জন্য। তোমরা তোমাদের নারীদেরকে সোলওয়ালা শক্ত জুতা পরিধান করাও আর তাদেরকে তাদের ঘরের মাঝে হাঁটাচলা করার প্রশিক্ষন দাও। কারণ, অদূর ভবিষ্যতে তারা এই কাজটি করতে বাধ্য হতে পারে”।
(আল ফিতান, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৪৫১)
এই বর্ণনায় বলা হয়েছে, মুসলিম নারীদেরকে আরাম প্রিয় না হওয়া উচিৎ। বরং তাদেরকে সোলওয়ালা শক্ত জুতা পরিধান করে নিজ ঘরে হাঁটা চলা করে জীবন অতিবাহিত করায় অভ্যস্ত হতে হবে, যাতে শরীরটা ক্ষীণ থাকে। কারণ, তাদের জীবনে এমন পরিস্থিতি আগমন করতে পারে যে, তখন নিজের সম্ভ্রম ও ঈমান বাঁচানোর তাগিদে তাদেরকে পাহাড়-বনে-জঙ্গলে পায়ে হেঁটে সফর করতে হবে। যেমনটি আফগানিস্তান, ইরাক, ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, সিরিয়ায় ঘটছে।
তাই কুরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক শরীয়তের গণ্ডির মধ্যে থেকে আমল করুন এবং গোটা পরিবার ও বংশের লোকদের মাঝে যথারীতি ঈমানের অভিযান পরিচালনা করুন। দাজ্জালের মহা ফেতনার ভয়াবহতা সম্পর্কে নিজেও সজাগ সচেতন থাকুন, অন্যদেরকেও সচেতন করে তুলুন।
স্মরণ করুন ইরাকের সেই অসহায় মায়েদের, ফিলিস্তিনের সেই বোনদের, যাদের হাতের মেহেদী শুকানোর আগেই তাদের সোহাগ উজাড় করে দেওয়া হয়েছে।
স্মরণ করুন, কাশ্মীর ও আফগানিস্তানের সে কন্যাদের, যারা জীবনের প্রতিটি পলক ও প্রতিটি মুহূর্ত বিহ্বলতার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে থাকে।
স্মরণ করুন, সিরিয়ার সেই নিস্পাপ শিশুদের, যারা খোলা আকাশের নিচে মা! মা! করে চিৎকার করছে, কিন্তু তাদের মায়েদের ইমাম মাহদির আগমনপূর্ব আলামত বহনকারী নুসাইরিয়া সম্প্রদায়ের বনু কাল্ব গোত্রের জালেমরা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে।
আমাদের মা ও বোনদের ভুলে গেলে চলবে না, যে দাজ্জালের সঙ্গে মহাযুদ্ধের ক্ষেত্রে এই অঞ্চলের (ভারতীয় উপমহাদেশের) মুজাহিদদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
হযরত নাহীক ইবনে সারীম (রাঃ) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“নিঃসন্দেহে তোমরা মুশরিকদের (মূর্তিপূজারীদের) সঙ্গে যুদ্ধ করবে। এমনকি এই যুদ্ধে তোমাদের বেঁচে যাওয়া মুজাহিদরা উর্দুন (জর্ডান) নদীর তীরে দাজ্জালের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হবে। এই যুদ্ধে তোমরা পূর্ব দিকে অবস্থান গ্রহণ করবে আর দাজ্জালের অবস্থান হবে পশ্চিম দিকে”।
(আল ইসাবা, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ৪৭৬)
এখানে মুশরিকদের দ্বারা উদ্দেশ্য উপমহাদেশের মূর্তিপূজারী জাতি। তার মানে এটি হাদিস শরীফে বর্ণিত সেই যুদ্ধ – “গাজওয়াতুল হিন্দ”, যেখানে মুজাহিদরা এই উপমহাদেশে আক্রমণ চালাবে, আল্লাহ তাদেরকে বিজয় দান করবেন, ক্ষমা করে দেবেন, বেঁচে যাওয়া মুজাহিদরা জেরুজালেমে ফিরে যাবে এবং সেখানে ঈসা (আঃ) সাক্ষাত পাবে এবং ঈসা (আঃ) নেতৃত্বে দাজ্জালের বিরুদ্ধে মহাযুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে।
( সুনানে নাসায়ী, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ৪২; আল ফিতান, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৪০৯ ও ৪১০)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেছেন,
“সমুদ্রের শহীদান (খ্রিস্টানদের সাথে মহাযুদ্ধে), আন্তাকিয়ার-আমাকের শহীদান ((খ্রিস্টানদের সাথে মহাযুদ্ধে) ও দাজ্জালের সাথে মহাযুদ্ধের শহীদান হল মহান আল্লাহর নিকট শ্রেষ্ঠতম শহীদ”।
(আল ফিতান, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৪৯৩)
এসব যুদ্ধের শহীদদের সম্পর্কে এক বর্ণনায় আরও বলা হয়েছে,
“উক্ত যুদ্ধে যে এক তৃতীয়াংশ লোক শহীদ হবে, তাদের এক একজন বদরি শহীদদের দশজনের সমান হবে। বদরের শহীদদের একজন সত্তরজনের জন্য সুপারিশ করবে। পক্ষান্তরে এই ভয়াবহ যুদ্ধগুলোর একজন শহীদ সাতশো ব্যক্তির সুপারিশের অধিকার লাভ করবে”।
(আল ফিতান, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৪১৯)
প্রিয় মা-বোনেরা,আপনাদের সামনে এক সুবর্ণ সুযোগ আছে এক একটা মুজাহিদের মা হবার। শহীদের গর্বিত বোন হবার। এ জন্য আপনাকে এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে, এটি একটি শানগত মর্যাদা। অন্যথায় মোটের উপর বদরি শহীদদের মর্যাদা ইতিহাসের সকল শহীদের মাঝে সবচেয়ে উঁচু। তাই, দ্বীনের উপর দৃঢ়পদ ভবিষ্যৎ প্রজন্ম রেখে যাওয়া দায়িত্ব আমাদের মা বোনদের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। আল্লাহ আমার সকল মুসলিম মা-বোনদের সহায় হোন,তাদের সবাইকে এক একজন মুজাহিদের মা হবার সৌভাগ্য দান করুন। আমীন।
No comments:
Post a Comment