ইলুমিনাতি পার্ট -১৩ (কৃষিক্ষেত্রে ষড়যন্ত্র)
যারা দাজ্জালের প্রভুত্ব মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানাবে, দাজ্জাল তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে ফিরে যাবে। এ যুগে কৃষক সমাজ বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে পারবে। বিষয়টিতে বিস্তারিত আলোচনায় প্রবেশ করার আগে একটি শব্দের মর্ম বুঝে নিন।
শব্দটি হল ‘পেটেন্ট’, যার অর্থ ‘আবিষ্কৃত দ্রব্য তৈরি বা বিক্রয়ের একক অধিকার’। এটি একটি আইন, যা মালিকের মালিকানা স্বত্তকে প্রমাণিত করে। এটি নতুন এক আন্তর্জাতিক কৃষিনীতি, যাকে কৃষক সমাজের উন্নতি ও স্বচ্ছলতার ক্ষেত্রে বিপ্লব নাম দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই নীতি কৃষকের হাত থেকে উৎপাদিত শস্যের এক একটি দানা কেড়ে নেওয়ার গভীর এক চক্রান্ত।
ইহুদী কোম্পানিগুলো যদি কোন শস্যবীজকে পেটেন্ট করে নেয়, তা হলে তার এই অর্থ এই দাঁড়ায় যে, সে এটির মালিক হয়ে গেছে। যেমন – তারা যদি একটা নাম দিয়ে কোন মুসলিম রাষ্ট্রের কোন বিশেষ প্রজাতির চালকে পেটেন্ট করে নেয়, তাহলে সেই মুসলিম দেশের প্রতিজন কৃষক সেই বিশেষ প্রজাতির চালের বীজ উক্ত কোম্পানির কাছ থেকে কিনতে বাধ্য হবে। এমতাবস্থায় যদি তারা নিজেরা বীজ উৎপাদন করে, তা হলে এই অপরাধের দায়ে তাদেরকে জরিমানা আদায় করতে ও জেলের বাতাস খেতে হবে। যেহেতু এই ধরনের বীজ কৃত্রিম উপায়ে জেনেটিক পদ্ধতিতে তৈরি করা হয় (যেটা সাধারণভাবে জিএম ফুড নামে পরিচিত), তাই এই ধরনের বীজ একবছরই ফসল উৎপন্ন করতে সক্ষম। পরবর্তী বছর যদি পুনরায় এই চালের চাষ করতে হয়, তাহলে নতুন বীজ ক্রয় করতে হবে। সেই সঙ্গে ফসলের রোগ বালাই দমনে ওই কোম্পানির ওষুধই কাজ করবে।
এই আইনটি দেখতে খুবই সরল মনে হয়। কিন্তু বিষয়টি ‘যার লাঠি তার মহিষ’ ধরনের। এই আইনের উপর ভিত্তি করে আন্তর্জাতিক ইহুদী কোম্পানিগুলো বিশ্ব বাজারের উপর নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠার পর এবার পৃথিবীর উৎপাদিত শস্যের উপর কব্জা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এই আইন তৈরি করেছে, যাতে কাল যদি কেউ তাদের কথা মান্য করতে অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে তাকে খাদ্যের প্রতিটি কণার জন্য মুখাপেক্ষী বানিয়ে দেওয়া যায়। পেটেন্ট বিলের মাধ্যমে এভাবে তারা ধীরে ধীরে উৎপাদিত শস্যের উপর কব্জা প্রতিষ্ঠিত করে চলছে। অল্পদিনের মধ্যেই তারা সমগ্র পৃথিবীর শস্যের উপর কব্জা প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে। বিষয়টি আরও ভালোভাবে বুঝতে হলে ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই ‘ফার্মারস কোর্ট’ এ পেটেন্ট নিয়ে কৃষকদের সাথে পেটেন্টকারী কোম্পানির কত কেস চলছে। খাদ্য উৎপাদনকে নিজের মুঠোয় নেওয়া ছাড়াও ইহুদীদের আরও একটি ধ্বংসাত্মক মিশন হল, তারা জীবাণু অস্ত্রের মাধ্যমে যে কোন ফসল ধ্বংস করে দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করছে। হয়তো ইতিমধ্যে কিছু জীবাণু অস্ত্র তৈরিও করে ফেলেছে।
বিশ্বপরিক্রমা পরে,খোদ বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি চিন্তা করুন। ধানের মণ কত?? কৃষক কেন তার জমিতে আগুন লাগাচ্ছে? কেন গোল্ডেন রাইস আমদানি করা হচ্ছে?? কেন আম নিয়ে প্রতিবছর ষড়যন্ত্র চলছে?? কৃষিপ্রধান দেশ হওয়া সত্ত্বেও কেন ধান-গম-সব্জি চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে? এটা কি দুঃখজনক ঘটনা নয় যে, বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ হওয়া সত্ত্বেও কৃষিপণ্য আমদানি করতে হয়?? কাদের কথায় করা হচ্ছে এসব?? উত্তর একটাই -"আইএমএফ আর বিশ্বব্যাংক"। বুদ্ধিজীবীরা বলেন তারা আমাদের "হিতাকাঙ্খী"। একদিকে আমাদের ঘরে ঘরে গিয়ে তারা পোলিও টিকা দিয়ে আসে আর অন্যদিকে দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
**জিএমও চাষ মানে বাংলাদেশের কৃষি সেক্টরকে ইহুদীবাদী কর্পোরেটদের কাছে বিক্রি করে দেয়া। জিএমও –এর বিষয়টা সহজে বুঝার জন্য 'ট্যাক্স’ বা ‘কর’ সিস্টেমটা চিন্তা করুন। যেমন ধরুন, আমরা আগে যেকোন স্থান থেকে যে কোন কিছু কিনতে পারতাম, বিক্রি করতে পারতাম, যাতায়াত করতে পারতাম, খাদ্য খেতে পারতাম। এজন্য মূল্ খরচের বাইরে কাউকে কিছু দিতে হতো না। কিন্তু ধিরে ধিরে ট্যাক্স বা কর নিয়ে আসা হলো। এখন আপনি কোন কিছু কিনলে আলাদা করে নির্দ্দিষ্ট এ্যামাউন্টের ট্যাক্স বা ভ্যাট দিতে হয়। কিছু বিক্রি করতে গেলে ট্যাক্স দিতে হয়। খাবার খেতে গেলে ১৫% ভ্যাট দিতে হয়, দোকান থেকে কিনতে গেলে ভ্যাট দিতে হয়। এভাবে দশ যায়গায় আপনার থেকে ট্যাক্স বা ভ্যাট আদায় করা হচ্ছে। জিএমও প্রযুক্তিটা হচ্ছে সেরকম। এটা ব্যবহার করলে একজন কৃষক আর স্বাভাবিক উপায়ে সনাতন পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে পারবে না। তাকে ধাপে ধাপে আটকে রাখবে ইহুদীবাদী কর্পোরেটরা। তাদেরকে টাকা দিয়ে নতুন সিস্টেম নিয়ে কাজ করতে হবে। উল্লেখ্য গত কয়েক বছর আগে ভারতে জিএমও বিটি তুলা চাষের কারণে বার বার খরচ করতে করতে ঋণ জর্জরিত হয়ে প্রায় ২ লক্ষ ২৭ হাজার কৃষক আত্মহত্যা করেছিলো। জিএমও’র প্রথম লোভনীয় ধাপ হচ্ছে- ‘রাউন্ড আপ রেডি’ ফসল
এ ফসলের বিজ্ঞাপনে বলা হয়- জিএমও প্রযুক্তিতে যেহেতু উদ্ভিদ নিজের অভ্যন্তরেই কীটনাশক উৎপাদন করবে, তাই আলাদাভাবে কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন পড়বে না। আর তাতে কৃষকের উৎপাদন খরচ কমে আসবে, লাভবান হবেন কৃষক। একইসাথে বলা হয়, জিএমও প্রযুক্তির ফসল আগাছানাশক। জিএমও প্রযুক্তি ব্যবহারে আগাছা দমন হবে।
এটা ঠিক প্রথম কয়েক বছর পোকার আক্রমণ ও আগাছা কম থাকে। কিন্তু কয়েক বছর থেকে ব্যতিক্রম দেখা যায়। আগাছা ও কীটের পরিমাণ বহুগুন বেড়ে যায়, ফলে কীটনাশন ও আগাছানাশকের পরিমানও বহুগুন বৃদ্ধি করতে হয়। এবং সেগুলো কিনতে হবে ঐ নির্দ্দিষ্ট বহুজাতিক কোম্পানির কাছ থেকেই, কারণ তারাই কেবল জানে, কোন কীটনাশক ও আগাছানাশক কাজ করবে আবার ‘টার্মিনেটর প্রযুক্তিতে জেনেটিকাল মোডিফিকেশণ করে বীজ এমনভাবে আটকে দেয়া হয়, যেন ঐ ফসল থেকে কৃষক নতুন বীজ না পায়। এই বীজ ব্যবহারের একটা পর্যায়ে কৃষক বলবে- “কি বীজ দিলেন, এখান থেকে নতুন বীজ পাওয়া যায় না।”
তখন কৃষককে বলা হবে- ‘ভার্মিনেটর প্রযুক্তি’ নেয়ার জন্য। এটা এমন এক রাসায়নিক, যা ব্যবহার করলে বীজের বন্ধাত্ব কাটে। কিন্তু এটা নিতে হবে ঐ নির্দ্দিষ্ট কোম্পানির থেকেই। এ প্রযুক্তিতে উদ্ভিদ জীবনের মূল ঘটনাগুলো নিয়ন্ত্রিত হবে রাসায়ানিক ব্যবহারে। যেমন অঙ্কুরোদগম, পাতা গজানো, ফুল ফোটানো, ফল পাঁকানো সহ যাবতীয় সবকিছুই নিয়ন্ত্রিত হবে ভার্মিনেটর প্রযুক্তিতে।
ততদিনে কৃষকের উৎপাদিত শষ্য স্তরে স্তরে আটকে থাকবে! ধাপে ফুল আসবে, কিন্তু দানা আসবে না। আসবে যখন ওদের থেকে কেনা সার দিবেন। আপনি বীজ সংগ্রহ করবেন, কিন্তু বীজ থেকে ধান গাছ হবে না, হবে যখন আপনি তাদের দেয়া রাসায়নিক দেবেন। অর্থাৎ টার্মিনেটর আর ভার্মিনেটর প্রযুক্তির যাঁতাকলে পিষ্ট হবে কৃষি, কৃষক, খাদ্য নিরাপত্তা, প্রকৃতি। খাদ্যের দাম বাড়বে বহুগুন। তৈরী হবে মনোপোলি বিজনেস।
কৃষককে যদি ৩-৪ বার জিএমও প্রযুক্তি ব্যবহার করানো যায়, তবে আগের জমানো বীজও নষ্ট হয়ে যাবে, তখন দেশের পুরো কৃষি সেক্টর ইহুদীবাদী কর্পোরেট কোম্পানির কাছে আটকে থাকবে। ওরা চাইবে তো ফসল হবে, ওরা চাইবে তো ফসল হবে না। আর পুরো সিস্টেম ওদের প্রযুক্তির কাছে আটকে থাকার কারণে কৃষককে বার বার ওদের টাকা দিয়ে ফসলের দেখা পেতে হবে।** (**অংশটুকু নয়ন চ্যাটার্জীর লেখা হতে সংগৃহীত)
(বাকি অংশ পরবর্তীতে দেয়া হবে)
No comments:
Post a Comment