ইলুমিনাতি পার্ট - ১৪ (কৃষিক্ষেত্রে ষড়যন্ত্র)
হযরত আসমা বিনতে ইয়াযীদ আনসারিয়া (রাযি.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,আল্লাহর রাসূল (সা:) একদিন আমার ঘরে অবস্থানরত ছিলেন। সে সময় তিনি দাজ্জাল সম্পর্কে বলেন,"তার আগে তিনটি বছর অতিবাহিত হবে। প্রথম বছর আকাশ এক-তৃতীয়াংশ বৃষ্টি আটকে রাখব আর মাটি এক-তৃতীয়াংশ ফসল আটকে রাখবে। দ্বিতীয় বছর আকাশ দুই-তৃতীয়াংশ বৃষ্টি আটকে রাখবে আর মাটি দুই-তৃতীয়াংশ ফসল ধরে রাখবে। তৃতীয় বছর আকাশ সম্পূর্ণ বৃষ্টি আটকে রাখবে আর মাটি তার সম্পূর্ণ ফসল আটকে রাখবে। ফলে সব ধরনের গবাদিপশু ধ্বংস হয়ে যাবে। (মুসনাদে আহমদ)
অপরদিকে মুসনাদে ইসহাক ইবনে রাহওয়াই এর বর্ণনায় আছে-" তুমি আকাশকে বৃষ্টি বর্ষণ করতে দেখবে,অথচ সে বৃষ্টি বর্ষণ করবে না। তুমি জমিনকে ফসল উৎপন্ন করতে দেখবে অথচ জমি ফসল উৎপন্ন করবে না।" (মুসনাদে ইসহাক ইবনে রাহওয়াই/ খ.১, পৃ.১৬৯)
হাদীস দুইটির অর্থ বিশ্লেষণ করুন। এগুলোর অর্থ এ-ও হতে পারে যে, বৃষ্টিও বর্ষিত হবে, ফসলও উৎপন্ন হবে তথাপি মানুষের কোন উপকার হবে না বরং মানুষ দুর্ভিক্ষের শিকার হবে। এই আধুনিক যুগে এর অনেক পদ্ধতি আছে। সমগ্র বিশ্বের কৃষিকর্মকে নিজেদের হাতের মুঠোয় নেয়ার জন্য ইহুদীদের পলিসির ছড়াছড়ি দেখলে আশ্চর্য হতে হয়। আগের পর্বে ধান-গম-সব্জি-ফলের পলিসি জেনেছেন। আজ আরো কিছু পলিসি সম্বন্ধে জানুন।
আপনি নিশ্চয়ই লেজার রশ্মির ব্যাপারে অবগত আছেন। বর্তমান প্রযুক্তিতে একে অত্যাধুনিক আর অভেদ্য অস্ত্র মনে করা হয়। কেউ যদি লেজার রশ্মি ব্যবহারের যোগ্যতা অর্জন করে ফেলে তাহলে সে এমন এমন কাজ করত সক্ষম হবে, যাকে মানুষ অলৌকিক ব্যাপার বলে বিশ্বাস করবে। এই লেজারের সাহায্যে বিশালায়তনের খেত-খামারকে চোখের পলকে উজার করে ফেলা আবার বিরান ভূমিকে সবুজ ফসলে ভরা মাঠে পরিণত করা কোন ব্যাপারই না। অবাক হচ্ছেন! টেলিভিশন কিংবা কম্পিউটার স্ক্রীনের কথা ভাবুন। এগুলোর পর্দায় আপনি যা কিছু দেখেন,তার সবই কিছু আলোমাত্র। যা নানা প্রকার প্রাণি ও বস্তুর আকারে আপনার চোখের সামনে প্রতিবিম্ব তৈরি করে। অর্থাৎ এই স্ক্রীনের সাহায্যে আপনি সেগুলো দেখে থাকেন। কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে এগুলো দেখার জন্য স্ক্রীনেরও প্রয়োজন পড়বে না। লেজার রশ্মির সাহায্যে যেকোন স্থানেই যেকোন কিছু দেখতে পারবেন,এমনকি শূণ্যেও। মানে আপনি দেখবেন,বাজারে কোম্পানির ভিডিও-বিজ্ঞাপন প্রচারিত হচ্ছে,কিন্তু কোন সাইনবোর্ড নাই। বরং যে দৃশ্য আপনি আগে স্ক্রীনে দেখতেন সেটা এখন শূণ্যেই দেখবেন। কাজেই কোন বিরান ভূমিকে লেজারের আলো দিয়ে সবুজ-শ্যামল দেখানো কোন ব্যাপারই না। সেই সাথে এই রশ্মি ব্যবহার করে বড় বড় অট্টালিকা উধাও করে দেয়া,পানিতে ও স্থলে কম্পন সৃষ্টি করা, একজন মানুষকে দ্বিখণ্ডিত করে পরে আবার জীবিত করা সবই সম্ভব হবে। এই লেজার গাইডেড মিসাইল ও বিমান বিধ্বংসী লেজার গুলো বর্তমানে আমেরিকা-ইসরাইলের অধীনে আছে।
দুগ্ধ শিল্পও এর বাইরে নয়। কদিন ধরে বাংলাদেশেও দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য নিয়ে নানা টালবাহানা শুর হয়েছে। ইহুদীবাদী কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের বুঝাচ্ছে দুধে অনেক ভয়াবহ ব্যাকটেরিয়া দেখা যাচ্ছে। অর্থাৎ এগুলো খাওয়া নিরাপদ না। এই অনিরাপত্তার ধুয়া তুলে তারা দেশের ডেইরী শিল্পকে নিজেদের কব্জায় নিয়ে নিচ্ছে। আর তাদের ধোকায় পড়ে আমরাও প্রাকৃতিক ভাবে সরাসরি প্রাপ্ত তরল দুধের বদলে নেসলে-ডানো,প্রাণ-ফ্রেশ এইসব প্যাকেটজাত দুধে নির্ভর হয়ে পড়ছি। কোরবানির সময় গরু মোটাতাজা করার ট্যাবলেট বা ইঞ্জেকশনের কথা সবাই জানেন। এটা জানেন কি বাজারে এমন এক ধরনের টিকাও পাওয়া যায় যেগুলোর প্রয়োগে গাভী,মহিষ,ছাগী ইত্যাদি পশু ধারণার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দুধ দেয়া শুরু করে। অর্থাৎ এটাও অনেকটা সেই পেটেন্ট বীজের মত যার মাধ্যমে তারা গাভী-মহিষের স্তন দুধে ভরে দেয়া ছাড়াও স্তনগুলোকে শুকিয়ে ফেলার শক্তিও অর্জন করে ফেলেছে। সেই একই কথা,তারা চাইলে আপনি দুধ পাবেন নয়তো নয়।
দাজ্জালের প্রচেষ্টা হলো তার আত্মপ্রকাশের আগে সমগ্র পৃথিবী খাদ্য-পানীয়র দিক থেকে তার মুখাপেক্ষী হয়ে যাক। এই প্রচেষ্টাকে সফল করার জন্য দীর্ঘমেয়াদী ও স্বল্পমেয়াদী উভয় ধরনের পরিকল্পনার অনুপাতেই সমানতালে কাজ চলছে। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে নেসলে'র মত প্রতিষ্ঠানগুলো দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছে। আইএমএফ ও ওয়ার্ল্ড ব্যাংক কৃষি খাতে সরকারগুলোকে এমন পলিসির জালে আটকে ফেলেছে,যা কিনা কৃষকদের মনোবল ও আগ্রহকে ভেঙে চুরমার করে দিচ্ছে। যার ফলে একদিকে খাদ্য উৎপাদন কমে যাচ্ছে অন্যদিকে দ্রব্যমূল্য বাড়ছে। দেশের কৃষিকে ধ্বংস করার জন্য বেশ কয়েকটি পরিকল্পনা সরকারগুলোর তত্ত্বাবধানেই বাস্তবায়িত হচ্ছে। যেমন-
১. উর্বর কৃষি জমিগুলোর উপর বিশাল-বিশাল হাউজিং প্রকল্প তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। আপনি আপনার কৃষি জমিগুলো কখনোই এমন স্কীমের জন্য বিক্রি করবেন না।
২. সারের মূল্য বৃদ্ধি,সময়মত বীজ না পাওয়া, ফসলের উপযুক্ত মূল্য না পাওয়া এই সবই করা হয় কৃষকদের আগ্রহ বিনষ্ট করার জন্য। এর একমাত্র সমাধান আপনাকে সেসব বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্ত থাকতে হবে,যা দাজ্জালি প্রতিষ্ঠানগুলো আপনার উপর আরোপ করে। সার,বীজ ও ওষুধে আপনাকে পরনির্ভরশীলতা পরিহার করে স্বনির্ভর হতে হবে।
৩. কীটনাশক ওষুধের মাধ্যমে ফসলকে এমনভাবে জীবাণু আক্রমণ দ্বারা ধ্বংস করা হচ্ছে যে কৃষক তাকে প্রাকৃতিক বালাই মনে করছে। অথচ এই জীবাণু অস্ত্র গুলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণাগারে তৈরি।
৪. ভারতের দিক থেকে নদীগুলোর পানি আটকে দেয়া হয়েছে। "আটকে দেয়া হয়েছে" এই জন্য বললাম কারণ সরকার আন্তর্জাতিক ইশারায় এই চক্রান্তের পথে কোন বাধা সৃষ্টি করে নি। অথচ এটা এমন এক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু যে, এর জন্য যদি ভারতের সাথে যুদ্ধ করারও প্রয়োজন হত তাহলেও পিছপা হওয়া উচিত ছিলা না। অথচ কাজের কাজ কিছুই না করে শুধু কতগুলো গৎবাঁধা বিবৃতিবাজি করা হয়েছে আর ভারতকে সব নদীর পানি বন্ধ করার সুযোগ দেয়া হয়েছে।
এই দাজ্জালি ব্যবস্থাপনা থেকে মুক্তিলাভের একমাত্র উপায়, দাজ্জালের এই অগ্রগামী বাহিনীকে এমন এক অবস্থায় পৌছে দিতে হবে যে,আপনার জমির সিদ্ধান্ত ওয়াশিংটন থেকে আসবে না। এই দাজ্জালি শক্তিগুলোকে পরাজিত করা ব্যতীত আপনি কিছুই করতে পারবেন না। যতই রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করুন, পুরাতন সরকারকে নামিয়ে নতুন সরকার ক্ষমতায় বসান;কিন্তু তাতে আপনার কোন লাভই হবে না। নানা শ্রুতিমধুর শ্লোগান আর চটচটে বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট না হয়ে দেশীয় পদ্ধতি ও জৈব সার ব্যবহার করুন। যত বেশি সম্ভব খাদ্যশস্য ফলান। আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন। তাহলে আল্লাহ বরকত দিবেন আর অল্পতেই আপনার জীবিকার ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
No comments:
Post a Comment